নির্বাচিত সরকারের হাতে বিচার না ছেড়ে দেওয়ার পেছনে কারণ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
![]() |
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখছেন। |
লন্ডন, ১১ জুন ২০২৫ – বর্তমান সরকারের হাতে বিচারিক দায়িত্ব হস্তান্তর না করে কেন অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই সেই দায়িত্ব পালন করছে—এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি তার একক সিদ্ধান্ত ছিল না, বরং একটি সমন্বিত দায়িত্ব যা তাকে দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যায়ের বিশেষ মহলের পক্ষ থেকে।
লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে আয়োজিত এক সংলাপে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “আমি এটা ডিসাইড করিনি। আমাদের এই দায়িত্বটি দেওয়া হয়েছে। যাঁরা আমাকে দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তাঁরা মূলত তিনটি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন—সুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দুর্নীতির বিচার এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী করা।”
অর্থনীতির সংকটে মধ্যেও আশার আলো: প্রবাসীদের রেমিটেন্স
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমাদের ইকোনমি এখন নেগেটিভ অবস্থায় রয়েছে। বিগত সরকারের নেওয়া ঋণ ও মেগা প্রজেক্টগুলোর বিল পরিশোধ আমাদের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, বিগত ১৭ বছরে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে দলীয়করণ, অস্বচ্ছ ঋণ বিতরণ এবং অর্থ পাচারের মত ঘটনাই আজকের এই সংকটের মূল কারণ।
তবে আশার কথা হলো—ওভারসিজ বাংলাদেশিরা বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন, যা দেশের অর্থনীতির মূল ভরসা হয়ে উঠেছে এবং ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্ট’-এ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
আন্তর্জাতিক বৈঠকে আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু ও চুরি যাওয়া সম্পদ
এই সফরে ড. ইউনূস বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোনাথন পাওয়েল-এর সঙ্গে। আলোচনায় উঠে আসে দুর্নীতির মাধ্যমে চুরি যাওয়া সম্পদ ফেরত আনার উদ্যোগ, রোহিঙ্গা সংকট, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উত্তরণের বিষয়।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সফরে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।
বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালনে ড. ইউনূস যে সাহসী ভূমিকা নিচ্ছেন, তা শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে। দুর্নীতির বিচার, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশ কতটা এগোতে পারে, তা নির্ভর করছে এই ধরনের নেতৃত্ব ও প্রবাসীদের সহযোগিতার ওপর।