বিদ্রোহীদের সমর্থনে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হলেন মোহাম্মদ আল-বাশির

মোহাম্মদ আল-বাশির সিরিয়ার নতুন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন, তার পেছনে বিদ্রোহী পতাকা এবং ইসলামী ঐতিহ্যের প্রতীক।
দামাস্কাসে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে মোহাম্মদ আল-বাশির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন।
দামাস্কাস, ১০ ডিসেম্বর (গ্লোবাল টাইলস বাংলা) – সিরিয়ার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মোহাম্মদ আল-বাশির। তিনি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সমর্থনে দেশটির প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। মাত্র তিন দিন আগে বিদ্রোহীরা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে মোহাম্মদ আল-বাশির ঘোষণা করেন, তিনি ১ মার্চ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করবেন। উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার একটি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মোহাম্মদ আল-বাশির এর আগে জাতীয় রাজনীতিতে তেমন পরিচিত ছিলেন না।

প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু

তিনি জানান, “আজ আমরা একটি মন্ত্রিসভা বৈঠক করেছি, যেখানে ইদলিব অঞ্চলের স্যালভেশন সরকারের দল এবং অপসারিত সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান কাঠামোকে অন্তর্বর্তী সরকারের আওতায় নিয়ে আসা।”

ভাষণের সময় তার পেছনে দুটি পতাকা দেখা যায়। একটি ছিল বিদ্রোহীদের পরিচিত সবুজ, কালো এবং সাদা রঙের পতাকা, এবং অন্যটি ছিল ইসলামী বিশ্বাসের ঐতিহ্যবাহী কালো লেখা সংবলিত সাদা পতাকা।

দামাস্কাসে নতুন শুরু

আসাদের পতনের পর দামাস্কাসে জীবনযাত্রায় নতুন গতির ছোঁয়া লেগেছে। ব্যাংক ও দোকানপাট পুনরায় খুলে গেছে, রাস্তায় ফিরেছে যানবাহন, এবং নির্মাণকর্মীরা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছে। শহরের রাস্তাগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি অনেকটাই কমে এসেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনী এখন শহরের দায়িত্ব নিয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এদিকে সিরিয়ার ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। দেশটির পুরনো সেনা ঘাঁটিগুলোতে ইসরায়েল হামলা চালাচ্ছে। তবে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আভাস পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, “HTS এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সিরিয়ার মানুষের কাছে ঐক্য ও সমন্বয়ের বার্তা পৌঁছাচ্ছে। এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত।”

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

সিরিয়ার পুনর্গঠন হবে একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং কঠিন কাজ। ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটি পুনর্গঠনের জন্য ব্যাপক অর্থায়ন এবং পরিকল্পনা প্রয়োজন। যুদ্ধের ফলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরগুলো পুনর্নির্মাণ, অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন দেশটির অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

নতুন সরকারের প্রতি আশা

মোহাম্মদ আল-বাশিরের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে দামাস্কাসের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মানুষদের চোখে একটি নতুন ভোরের আশা প্রতিফলিত হচ্ছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url