ফ্রান্সে নতুন প্রধানমন্ত্রী বায়রু, কিন্তু পুরনো সমস্যাই রয়ে গেল

ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের একটি প্রতিকৃতি।
ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু, যিনি বর্তমানে বাজেট সংকটসহ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

প্যারিস, ১৫ ডিসেম্বর: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ফ্রাঁসোয়া বায়রুকে নিয়োগ দিয়েছেন। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পার্লামেন্টের বিভাজন তার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ১৯৯০-এর দশকে শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন বায়রুর উদ্যোগে বেসরকারি স্কুলে ভর্তুকি বাড়ানোর পরিকল্পনা দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়েছিল। সেসময় তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে চার বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তবে এবার পরিস্থিতি আরও জটিল। ফ্রান্সের জাতীয় সংসদে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত, যেখানে বাজেট পাস করাই নতুন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ারের সরকার প্রথমবারের মতো ১৯৬২ সালের পর পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়। যদিও আপাতত জরুরি তহবিল নিশ্চিতের জন্য দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয়েছে, কিন্তু ২০২৫ সালের বাজেট পাসের কঠিন কাজটি এখনো বাকি।

মহাজোটের আহ্বান এবং রাজনৈতিক সমালোচনা
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ‘গণতান্ত্রিক দলগুলোর ঐক্য’ কামনা করেছেন এবং বায়রুকে ‘সবচেয়ে ঐক্যমুখী’ প্রার্থী হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে বিরোধী দল বিশেষ করে বামপন্থী সমাজবাদীরা এই নিয়োগকে ‘পুরনো সমস্যার পুনরাবৃত্তি’ বলে সমালোচনা করেছেন।

ঋণ এবং বাজেটের সংকট
৭৩ বছর বয়সী বায়রু তার রাজনৈতিক জীবনে মাঝামাঝি পথের রাজনীতি নিয়ে কাজ করেছেন এবং আগেও ফ্রান্সের ঋণের ঝুঁকি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। শুক্রবার তিনি আবারো ঋণ সংকটকে ‘নৈতিক ও আর্থিক সমস্যা’ বলে উল্লেখ করেন। তবে বাজেট পাসের জন্য বিরোধীদের চাওয়া দাবি মেনে নেওয়া হলে তা ফ্রান্সের জন্য আর্থিকভাবে ব্যয়বহুল হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ এবং বাজেটের ভবিষ্যৎ
বামপন্থী নেতারা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, নতুন প্রধানমন্ত্রীও যদি সংসদের বাইরে বিশেষ সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন তবে তারা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করবে। এদিকে, ফার-রাইট ন্যাশনাল র‍্যালির নেতা জর্ডান বারদেলা জানিয়েছেন, তাদের প্রধান চাওয়া ২০২৫ সাল পর্যন্ত পেনশনকে মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করা।

মুদ্রা সংকোচনের জন্য বার্নিয়ার সরকারের যে পরিকল্পনা ছিল—বড় কোম্পানির ওপর কর বাড়ানো ও পেনশনের ব্যয় সংকোচন—তা তার সরকারের পতনের পর স্থগিত হয়ে গেছে। তবে নতুন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বাজেট ঘাটতি ৬.১ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা এবং একে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় রূপ দেওয়া।

ফ্রান্সের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
বায়রুর নতুন সরকারকে সামনের দিনে বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই আগামী ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রস্তুত করছে, যেখানে ফার-রাইট নেত্রী মেরিন লে পেনের জনপ্রিয়তা নতুন রেকর্ড গড়েছে।

সংক্ষেপে:

  • নতুন প্রধানমন্ত্রী: ফ্রাঁসোয়া বায়রু
  • চ্যালেঞ্জ: বাজেট পাস, ঋণ সংকট, বিরোধীদের বাধা
  • রাজনৈতিক অবস্থা: তিনটি বৃহৎ দলীয় বিভাজন এবং অনাস্থা ভোটের ঝুঁকি

ফ্রান্সের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে নতুন সরকার কতটুকু সফল হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url